নারী ক্রিকেটের শুরু যেভাবে_

নারীকথন | প্রকাশিত: ৯ অক্টোবর ২০২০ ০০:৩২; আপডেট: ৯ অক্টোবর ২০২০ ০১:০৮

ছবিঃ ইন্টারনেট
 
প্রমিলা ক্রিকেট এখন এত শত প্রাপ্তি অপ্রাপ্তি দেশে ও দেশের বাইরে এই নারীদের ক্রিকেট নিয়ে। নিজেরা নিজেদের ছাড়িয়ে যাচ্ছে একের পর এক। প্রতিকূলতা থাকছে তবে পায়ে মাড়িয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বীরদর্পে। কিন্তু এই যাত্রা শুরু হয়েছে কার বা কাদের হাত ধরে তার ইতহাস কি আমরা জানি? মেয়েদের ক্রিকেট এর গোড়াপত্তন ঘটে ১৭৪৫ সালে ২৬ জুলাই ইংল্যান্ডের সারের ব্রামলি ও হ্যামব্লেডন গ্রামের ২২ জন গৃহপরিচা্রিকার মাধ্যমে এবং সাথে ছিল দুজন আম্প্যায়ার। ধারণা করা হয় এটিই মেয়েদের প্রথম ক্রিকেট ম্যাচ। আনুষ্ঠানিক ক্রিকেট ম্যাচই ছিল সেটা। ব্যাটে , বলে, ফিলিডিং এ মেতে উঠেছিল মাঠের ভেতরের ও বাহিরের সকলে। খেলাটি এতটা আলোচিত ছিল যে তখনকার একটি দৈনিক “দি মার্কারি” তে এটি নিয়ে প্রতিবেদন এসেছিল।
 
 
সেই প্রতবেদনের পোশাকে ভিন্নতে ছিলনা দুই দলের। দুই দলের পরনেই ছিল সাদা পোষাক তবে তাদের আলাদা করা গিয়েছিল তাদের মাথার ফিতা দিয়ে। হ্যাম্বলেডনের মেয়েরা মাথায় দিয়েছিল লাল ফিতা এবং ব্রামলির মেয়েরা নীল। এখন উতসাহ জাগতে পারে সেই ঐতিহাসিক খেলায় রান কত হয়েছিল? কোন দল জিতেছিল? সেই ম্যাচে টোটাল রান হয়েছিল ২৪৬ রান। যার মধ্যে ১২৭ রান করে শিরোপা জিতেছিল হ্যামব্লেডন। এরপর ইংল্যান্ডেই আরো অনেক ক্রিকেট ম্যাচ হয়েছিল। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ১৭৪৭ সালের ১৩ জুলাই এর আরেকটি, ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয় শার্ল্টন এবং চিল্গ্রোভের সাসেক্সের সাথে। তবে খেলাটি শেষ করতে পারেনি অভ্যন্তরিন কিছু সমস্যার কারনে। তার ঠীক ১০০ বছর পরে ইয়র্কশায়ারে মেয়েদের ক্রিকেটকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়ার জন্য প্রথম একট ক্রিকেট ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৮৭ সালে যার নাম ছিল “হোয়াইট হেদার ক্লাব”।
 
১৮৯০ সাল, মেয়েদের মূল একটি ইংলিশ ক্রিকেট টীম প্রস্তুত হয় “অরিজিনাল ইংলিশ লেডী ক্রিকেটার্স” নামে। এদের খেলার ব্যপ্তির মাধ্যমেই মেয়েদের ক্রিকেট খেলা চারিদিকে নাম ডাক ছড়ায় এবং আগ্রহ বাড়তে থাকে। আগ্রহ বাড়তে থাকার পেছনে আরো কিছু কারণ ছিল। ক্রিকেট মূলত লন টেনিসের মতো অতোটা কষ্টসাধ্য নয়, স্কেটিংয়ের মতো ঝুঁকিপূর্ণ নয়। এবং এই ক্রিকেট দলই মেয়েদের প্রথম টেস্ট ম্যাচ খেলে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। এই তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজে দুটিতে জেতে এবং একটি ম্যাচ ড্র করে ইংল্যান্ডের মেয়েরা। এরপর এই দল তাদের পরবর্তি ম্যাচ খেলে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। এই সফরেই ইংল্যান্ডের কিংবদন্তি নারী ক্রিকেটার “বেটি স্নোবল” ১৮৯ রানের একটি ঐতিহাসিক ইনিংস খেলেন যা অর্ধশত বছর পর্যন্ত অক্ষত ছিল। ইংল্যান্ডের পর অস্ট্রেলিয়াতে নারী ক্রিকেটের জাগরণ শুরু হয়। অস্ট্রেলিয়ার নারী ক্রিকেটের জননী বলা হয় কিংবদন্তি ‘লিলি পলেট হ্যারিস’কে। ১৮৯৪ সালে তিনি অস্টার কোভ দলকে নেতৃত্ব দেন। এই দলটিই ছিল অস্ট্রেলিয়ায় ব্রিটিশ উপনিবেশিক যুগের প্রথম কোনো নারী ক্রিকেট দল।
 
এরপর ১৯০৫ সালে ‘ভিক্টোরিয়া উইমেন্স ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন’ প্রতিষ্ঠা পায়। আর ১৯৩১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘অস্ট্রেলিয়ান উইমেন্স ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন’। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার মেয়েদের সব ধরণের ক্রিকেট ‘উইমেন্স ন্যাশনাল ক্রিকেট লীগ’ কর্তৃক পরিচালিত হচ্ছে। ১৯৫৮ সালে ইন্টারন্যাশনাল উইমেন্স ক্রিকেট কাউন্সিল প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর আস্তে আস্তে নারী ক্রিকেটের বিকেন্দ্রীকরণ হতে শুরু করে। নারী ক্রিকেটের টেস্ট খেলুড়ে দেশের তালিকায় রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ভারত, আয়ারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এ পর্যন্ত মেয়েদের ১৩১টি টেস্ট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে। তার অধিকাংশই অবশ্য ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া খেলেছে। প্রথম দিকে মেয়েদের টেস্ট ছিল তিনদিনের। কিন্তু ১৯৮৫ সাল থেকে দিনের সংখ্যা বেড়েছে। ১৯৩৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত ইংল্যান্ড নারী ক্রিকেট দল ৮৭টি টেস্ট খেলেছে। জিতেছে ১৯টি। হেরেছে ১১টিতে। আর ড্র করেছে ৫৭টি। একই সময় থেকে আজ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া নারী ক্রিকেট দল খেলেছে ৬৭টি টেস্ট। জয় ১৮টিতে, পরাজয় ৯টিতে আর ড্র ৪০টিতে।
 
এবার ওয়ার্ল্ড কাপ প্রসঙ্গ। আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি যে, ছেলেদের প্রথম ওয়ার্ল্ড কাপের দু’বছর আগে শুরু হয় মেয়েদের ক্রিকেট ওয়ার্ল্ড কাপ। ১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত হয় মেয়েদের প্রথম ওয়ানডে বিশ্বকাপ। ২০১৭ সালের জুলাই মাসে ইংল্যান্ডের মাটিতে সর্বশেষ মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপের একাদশতম আসর হয়ে গিয়েছে। ২০২১ সালের ১২তম আসর জানুয়ারি ও ফেব্রিয়ারিতে নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠানিত হয়ার কথা রয়েছে। ছেলেদের ক্রিকেটের মতো মেয়েদের ক্রিকেটের বিশ্বকাপেও অস্ট্রেলিয়ার প্রাধান্যই বেশি। অস্ট্রেলিয়া নারী ক্রিকেট দল এই পর্যন্ত সাতবার ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয় করে। অপরদিকে পার্থক্য এই যে, ছেলেদের ক্রিকেটে ওয়ার্ল্ড কাপের দেখা না পাওয়া ইংল্যান্ড নারীদের ক্রিকেটে তিনবার ওয়ার্ল্ড কাপ জয় করে। ওয়ার্ল্ড কাপের আরেকটি আসর জেতে নিউজিল্যান্ড। ২০০৯ সাল থেকে অনুষ্ঠিত হচ্ছে মেয়েদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। এই বছর অস্ট্রেলিয়ায় হয়ে গেল এই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সপ্তম আসর। যেখানে বরাবরের মতোই শিরোপা জিতেছে অস্ট্রেলিয়া।
 
লেখাঃ আয়েশা আকতার সুমি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top