বিচ্ছেদ কোন লজ্জার নাম নয়।

নারীকথন | প্রকাশিত: ৯ অক্টোবর ২০২০ ১৬:২৯; আপডেট: ৪ জুন ২০২৩ ১৩:৪১

পৃথিবীর সব দেশেই বিবাহ একটি পবিত্র সামাজিক বন্ধন। সুখ,স্বপ্নে ঘেরা এক নতুন জীবনের আরম্ভ। কিন্তু পরিবর্তনশীল মানুষ, পরিবর্তনশীল পরিস্থিতি সবসময় আমাদের স্বপ্নের সহায় হয়না তাই ঘটে যায় নানা বিপত্তি। সেরকমই এক বিপত্তির নাম “বিবাহ বিচ্ছেদ “। বিচ্ছেদ বরাবরই অনাকাঙ্ক্ষিত আর মেয়েদের জন্য বিচ্ছেদ কেবল অনাকাঙ্ক্ষিত নয় বলা যায় জীবন বিপন্নের চিত্র। সারাবিশ্বে যেখানে বিচ্ছেদ কে সহজ ঘটনা বলে জানা যায় সেখানে আমাদের সমাজে দেখা যায় এক ভিন্ন চিত্র। “বিচ্ছেদ যেন নারীর অস্তিত্ব সংকট “।

সমাজে নারীর একক অবস্থানকে আমরা এখনো মেনে নিতে পারিনি তাই তাকে শুনতে হয় নানা কটুবাক্য, কাটাতে হয় নিরাপত্তাহীন জীবন। প্রতিমুহূর্তে সমাজ,পরিবার তাকে বোঝা হিসাবে ভাবাতে বাধ্য করে। সমাজের এই অসুস্থ দৃষ্টিভঙ্গি, অমানবিক চিন্তা ধারা নারীর যাপিত জীবনের স্বাধীনতা,সমৃদ্ধি ও সুন্দর জীবনের অন্তরায়। এ ধরনের চিন্তাধারা থেকে বের হতে হলে বিচ্ছেদ কেন হয় এর পিছনের কারণগুলো জানা প্রয়োজন। বিচ্ছেদ নিয়ে সমাজের নাকউঁচু দৃষ্টিভঙ্গির অন্যতম খোরাক হলো বিচ্ছেদের পিছনের কারণ গুলো না জানা। যার কারণে তারা একজন মেয়ের সংকটকালীন পরিস্থিতি বুঝতে পারেনা এবং তারা বিচ্ছেদের সিদ্ধান্তেকে বাকা চোখে দেখে, যেটাকে নারীর মিথ্যা অহংকার, আধিপত্য এবং চারিত্রিক ত্রুটি বলে মনে করে।

বাংলাদেশের পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ প্রতিবেদন বলছে, বিবাহ বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে নারীরা বর্তমানে ঝুঁকিতে রয়েছে। বর্তমানে মোট জনসংখ্যার মধ্যে প্রতি হাজারে ১০.৮ শতাংশ নারী বিবাহ বিচ্ছেদ করছেন এবং এর বিপরীতে ১.৫ শতাংশ পুরুষ বিবাহ বিচ্ছেদ করছেন। নারীদের বিচ্ছেদের কারন হিসাবে উঠে এসেছে যৌতুকের জন্য নির্যাতন , অন্য নারীর প্রতি স্বামীর সম্পর্ক,দ্বিতীয় বিয়ে,মতের বনিবনা না হওয়া, শাশুড়ীর সঙ্গে দ্বন্দ্ব, স্বামীর মাদকাসক্তি এসব প্রধান কারণ। উচ্চবিত্ত শ্রেনীর বিচ্ছেদের বেশির ভাগ ই হচ্ছে অবিশ্বাস জনিত কারণ এবং সামাজিক মাধ্যম গুলোর অপব্যবহার। সমাজের চোখে যখন এই কারণ গুলো বিচ্ছেদের জন্য যথেষঠ মনে হবে, নির্যাতিত জীবন যখন মানবিকতার আশ্রয়ে আসবে তখন নারীরা বিচ্ছেদের পরবর্তী কোনঠাসা জীবন থেকে সামাজিক মুক্তি লাভ করবে। বিচ্ছেদ তখন সংকট নয় মুক্তি হয়ে ধরা দিবে।

অনেককেই দেখা যায় বিচ্ছেদের পরবর্তী জীবন নিয়ে হীনমন্যতা ভোগে, লজ্জা পায় নারীদের এসব থেকে বের হয়ে আসতে হবে । নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাসী, সাহসী এবং পজেটিভ হতে হবে। নিজের সিদ্ধান্ত নিয়ে কখনো দ্বিধাগ্রস্ত হওয়া যাবেনা। মনে রাখতে হবে, “বিচ্ছেদ কোন লজ্জার নাম নয়”।

লেখাঃ সানজিদা জেরিন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।



বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top