আমার জীবনে বিয়ে বা মাতৃত্ব আমার সিদ্ধান্ত।

আয়শা আকতার সুমি, ঢাবি। | প্রকাশিত: ২০ ডিসেম্বর ২০২০ ০০:৪২; আপডেট: ৪ জুন ২০২৩ ১৩:০৫

ছবিঃ ইন্টারনেট

বিয়ে করছো কবে? কখন বাচ্চা নেবে? মহিলাদের কীভাবে বাসা এবং কাজের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে তা জানা উচিত। বিবাহিত এবং দুটি বাচ্চার মা হওয়ার পরেও কীভাবে অফিস মেইন্টেইন কর? এইসকল প্রশ্ন অথবা বাঁকা চোখ দেখে মেয়েরা ক্লান্ত পরিবারে বা বাহিরে। আমরা বর্তমানে একবিংশ শতাব্দীতে বাস করছি কিন্তু আমরা কি সত্যিই এগুতে পারছি? আমাদের পক্ষে কেন ব্যক্তি হিসেবে নারীদের দিকে তাকানো এতটা কঠিন? ‘বিবাহের সামগ্রী’ বা ‘সম্ভাব্য মা’ হিসেবে মেয়েদের এত অগ্রাধিকারই বা কেন? সবার জন্য বিবাহের আলাদা অর্থ রয়েছে- আমরা কি বুঝতে পারি? বিবাহ এবং মাতৃত্বের ধারণাটি সবার জন্য দায়মুক্তির একটা জায়গা। এটি অবশ্যই ঠিক সবার ধারনা এই ক্ষেত্রে এক নয়। অনেকের ক্ষেত্রেই এটা একটা চয়েস। অনেকের কাছেই বিবাহ চিরস্থায়ী সাহচর্যের বন্ধন বলে মনে হয়। কিছু মহিলার ক্ষেত্রে এটি মুক্তিও দিতে পারে। অনেকেই সঙ্গী পেলে আরও ভাল জীবনযাপন শুরু করে।

তবে সবার গল্প একই রকম হয় না! তাই বলে সুখী বিবাহিত জীবন কেউ কাটাচ্ছেন না এমন না। তবে ম্যাক্সিমাম মেয়ে ভুগছে পিতৃতন্ত্রের শৃঙ্খলে। মহিলারা প্রায়ই "একজন মেয়ে" ট্যাগটির জন্য নিজের পছন্দের জীবনটি ত্যাগ করতে বাধ্য হন। তবে অনেক নারীই রয়েছেন যারা তাদের স্বপ্নগুলো সীমাবদ্ধ রাখেন "কারো বৌ" হয়া পর্যন্তই। প্রশ্ন এখানেই যে বিয়ের মানে কেন নিজেকে হারিয়ে ফেলা যেখানে পাখা মেলে উড়ে বেড়ানোর কথা ছিল! মহিলাদের বৈবাহিক অবস্থানের ভিত্তিতে বিচার করা বন্ধ করুন। একবার বিবাহিত ট্যাগ টি লেগে গেলে সেই মেয়েদের ডুবে থাকতে হয় বিশাল বড় প্রত্যাশার পাহাড়ের নিচে। মজার বিষয় হলো, মেয়েদের নিয়ে সমাজের সকলের মাথা ব্যথা, এমনকি যারা তার সাথে প্রত্যক্ষ কোন সম্পর্কেও নেই। বিয়ের আগে- এমন জামাকাপড় পড়লে বিয়ে হবে কিভাবে? এত ছেলে বন্ধু থাকলে বিয়ে কিভাবে হবে? মেয়ে মানুষ মেয়ে মানুষের মতো থাকলেই হয়! বিয়ের পরে- জামাই কিভাবে এইসব জামা কাপড় এলাউ করে? এতরাত পর্যন্ত বাহিরে থাকে জামাই কিছু বলেনা? বিয়ের আগের ছেলে বন্ধুরা এখনো কিভাবে বন্ধু থাকে? বিয়ের পর অনেক সময় তো হলো,বাচ্চা নিবা কবে? কথাগুলো হাস্যকর শোনালেও এইসকল অভিজ্ঞতা প্রতিটা মেয়ের ঝুলিতে ভরা। সুশ্মিতা সেন এবং মোনা সিং নারীর ক্ষমতায়নের উদাহরন আগেই বলা ছিল প্রতিটা সিদ্ধান্ত ছেলে মেয়ে ভেদে প্রত্যেকের চয়েস। যেমন প্রত্যেক স্ত্রীই মা হতে চান না এবং প্রতিটি মা স্ত্রী হতে চান না। সেরকম মাতৃত্ব হ'ল সেই চয়েস যখন কোনও মহিলা সেই দায়বদ্ধতা নিতে আগ্রহী এবং প্রস্তুত হোন।

প্রায় এক দশক আগে ভারতীয় অভিনেত্রী সুস্মিতা সেন দুটি কন্যা দত্তক নেন, একজনকে ২৪ বছর বয়সে এবং অন্যজন কে এক দশক আগে। এক সাক্ষাত্কারে তিনি বলেছিলেন, “আমি সবসময় মা হতে চেয়েছিলাম। মা হওয়া এমন একটি আহবান যেখানে বাচ্চা আমার কি না এটা নিয়ে কনফিউজ হবার কোনো জায়গা নেই"। সম্প্রতি, মোনা সিং তার ইনস্টাগ্রাম পোস্ট এ স্পার্ম ব্যাংকিং সম্পর্কে লিখেছিলেন- “আমি খুশি যে আমি ৩৪ বছর বয়সে আমার ডিম হিমায়িত করেছিলাম কারণ সে সময় আমি মাতৃত্বের জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। আমি আমার জীবনের এতো গুরুত্বপুর্ণ বিষয়টি সিদ্ধান্তে নিতে সময় নিতে চাই এবং যখন সময় আসবে ঠিক তখন আমি এটিকে আন্তরিকভাবে আলিঙ্গন করতে চাই।" এত বাঁধা পেড়িয়ে যারা নিজেদের মনোবল ধরে রেখেছেন তাদের জন্য চিয়ার্স- যে সকল মহিলার নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন,এবং যে কোন কিছুর এগেইন্সটে নিজের অবস্থান শক্ত রেখেছে,আসুন, তাদের প্রশংসা করার জন্য এক মুহুর্ত সময় নিই। এখন সময় আমরা বিবাহ এবং মাতৃত্বকে বাধ্যবাধকতার পরিবর্তে ব্যক্তিগত পছন্দ হিসাবে দেখা শুরু করি। সমাজ এর এখন উচিত মহিলাদের জন্য ম্যাচমেকিংয়ের ব্যবসা বন্ধ করা। একজন মহিলা হিসাবে আমি বিশ্বাস করি যে, আমাদের পক্ষে সবচেয়ে ভাল যা, তা সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার আমি ছাড়া আর কারও নেই। বিবাহ এবং মাতৃত্ব যদি আপনার জীবনে সুখ আনতে পারে তবে অবশ্যই সে রাস্তায় এগিয়ে যান। তবে আপনি যদি ভাবেন যে ইটস নট ইওর কাপ অফ টি, তবে অন্যকে খুশি করার জন্য আপনার আপনাকে জোড় করার ও কোন দায়বদ্ধতা নেই।



বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top