ওভারিয়ান সিস্ট ও যাবতীয়.....
আয়েশা আক্তার সুমি, ঢাবি। | প্রকাশিত: ১৬ জুন ২০২১ ০০:১৪; আপডেট: ৪ জুন ২০২৩ ১২:৫৯
-2021-06-16-00-12-57.jpg)
মহিলাদের প্রজননতন্ত্রের অন্যতম হল ডিম্বাশয় যা ডিম্বাণু (ঋতুস্রাবের সময়ে ডিম্বানু বিমুক্ত করে) উৎপাদনে সাহায্য করে। ডিম্বাশয়ের মধ্যে ছোট ছোট গ্রন্থি থাকে যেগুলি ঋতুস্রাবকালীন সময়ে উৎপন্ন হয় এবং ডিম্বানু মুক্ত করে শরীরের সঙ্গে মিশে যায়। যখন ডিম্বাশয়ের মধ্যে কোনও গ্রন্থি ডিম্বানু মুক্ত না করে বা ডিম্বানু মুক্ত করার পর মিশে না যায় বা দুটিই হয় তখন ওভারিয়ান সিস্ট গঠন হয়। ফলে, গ্রন্থিটি তরল পদার্থ ভর্তি বুদবুদের মতো ফুলে ওঠে। মহিলাদের মধ্যে ওভারিয়ান সিস্ট গঠন খুবই স্বাভাবিক ঘটনা এবং তার কোনও উপসর্গ নাও দেখা যেতে পারে, অর্থাৎ দীর্ঘদিন উপসর্গহীন অবস্থায় থাকতে পারে।
ছোট ছোট সিস্ট পুঁতির মালার মতো ওভারি বা ডিম্বাশয়কে ঘিরে রাখে। এই সিস্টের জন্য ওভারির স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়।
ওভারিয়ান সিস্ট রোগের কারণ
অনিয়মিত সেক্স লাইফ, হরমোনের সমস্যা, অল্পবয়সে ঋতুস্রাব শুরু হওয়ার কারণে সিস্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
সিস্টের প্রকার
নারীরা অনেক ধরনের সিস্টে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। যেমন– ফাংশনাল সিস্ট, পলিসিস্টিক (পিসিওএস) সিস্ট, অ্যান্ডমেট্রিওটিক সিস্ট, ডারময়েড সিস্ট এবং সিস্ট এডোনোমা। তবে একাধিক সিস্টকে একত্রে পলিসিস্ট বলা হয়। ওভারি বা ডিম্বাশয় ফিমেল রিপ্রোডাক্টিভ অঙ্গগুলোর মধ্যে অন্যতম।
ওভারিয়ান সিস্ট রোগের কারণ
অনিয়মিত সেক্স লাইফ, হরমোনের সমস্যা, অল্পবয়সে ঋতুস্রাব শুরু হওয়ার কারণে সিস্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
কিশোরীদের বয়ঃসন্ধিকালে এ সমস্যা হতে পারে। এ ছাড়া দেরিতে বিয়ে, দেরিতে সন্তান নেওয়ার কারণেও এ সমস্যা হতে পারে।
কিছু সিস্ট আছে, যা ক্যান্সারিয়াস (ম্যালিগন্যান্ট) হয়। সাধারণ কিছু লক্ষণের মাধ্যমে এ রোগ প্রকাশ পায়। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে যদি এ রোগের চিকিৎসা শুরু করা যায়, তবে তা সারিয়ে তোলা সম্ভব। তবে তার আগে আমাদের সিস্ট হওয়ার লক্ষণগুলো জানতে হবে।
এই রোগের লক্ষণ
এই রোগের কিছু লক্ষণ রয়েছে। অনিয়মিত ঋতুস্রাব, মাসিকের সময় মারাত্মক ব্যথা, তলপেট ফুলে যাওয়া, ব্যথা প্রস্রাবে সমস্যা, বমিভাব, সিস্টের ইনফেকশন, তলপেটে ব্যথার সঙ্গে হঠাৎ ওজন বৃদ্ধি পায়। তবে যদি ক্যান্সার দেখা দেয় তা হলে ওজন কমে যাবে।
ওভারিতে সিস্ট দেখা দিলে ডায়রিয়া অথবা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হতে পারে। এ ছাড়া ওভারিয়ান সিস্ট হলে পেট ফাঁপা, বুক জ্বালাপোড়াও হয়ে থাকে। এই রোগ হলে পিঠে চাপ পড়ে এবং তা থেকে ব্যথা সৃষ্টি হয়। কেউ কেউ এ কারণে থাইয়ে ব্যথা অনুভব করে থাকেন।
চিকিৎসা
ওপরের লক্ষণগুলো দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এক্ষেত্রে বিয়ে করা এবং সন্তান নেওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। যদি বংশে কারও সিস্ট থাকে, তবে ঝুঁকি বেশি থাকে।
লাইফস্টাইল ম্যানেজমেন্ট
ওভারিয়ান সিস্ট সামলাতে কয়েকটি পদক্ষেপ খুব কাজের হতে পারে। এগুলির মধ্যে স্বাস্থ্যরক্ষার একটি তালিকা আছে যা থেকে জানা যাবে ‘কী করবেন’ আর ‘কী করবেন না’-
১.ধূমপান ত্যাগ করুন-
সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, যে সব মহিলা ধূমপান করেন তাঁদের বেশি ওভারিয়ান সিস্ট গঠন হয়ে থাকে। কাজেই যে কোনও মূল্যে অতিরিক্ত ধূমপান এবং মদ্যপান থেকে বিরত থাকা উচিত।
২.ক্যাফিন গ্রহণ সীমিত করুন-
ক্যাফিনের কারণে ওভারিয়ান সিস্ট গঠন বাড়ে। কাজেই ক্যাফেইন গ্রহণ সীমিত করুন।
৩.চিনি খাওয়া কমান-
অতিরিক্ত চিনি খেলে ফোলা এবং প্রদাহ বাড়বে। যদি আপনি সিস্ট থেকে ইতিমধ্যেই কষ্ট পাচ্ছেন তাহলে চিনি এবং অন্যান্য পরিশ্রুত কার্বোহাইড্রেটের কারণে ব্যাথা বাড়বে। কাজেই, চিনি খাওয়া সীমিত করতে হবে।
৪.ইস্ট্রোজেন গ্রহণ সীমিত করুন-
খাদ্যের উৎস যেমন সয়া এবং খাদ্যে সংযোজিত (অ্যাডিটিভ)পদার্থে বহুল পরিমাণে ইস্ট্রোজেন এবং জেনোইস্ট্রোজেন আছে। শরীরে অতিরিক্ত ইস্ট্রোজেন মাত্রার উপস্থিতি হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত করতে পারে, যা থেকে আবার ওভারিয়ান সিস্ট হতে পারে।
৫.সুষম খাদ্য খান-
যদি এখনই আপনার ওভারিয়ান সিস্ট হয়ে থাকে তাহলে আপনাকে স্বাস্থ্যকর এবং সুষম খাদ্য খাওয়ার বিষয়ে বিশেষ যত্ন নিতে হবে। ফের যাতে সিস্ট গঠন না হয় তার জনা আপনার খাদ্যের মধ্যে অবশ্যই থাকতে হবে ফল, সবজি, শস্য। এই খাদ্যবস্তুগুলি তন্তুসমৃদ্ধ, যা প্রাকৃতিক উপায়ে সিস্ট নিরাময়ে সাহায্য করে এবং বারবার সিস্ট গঠনের পথে বাধার সৃষ্টি করে।
৬.ব্যায়ামের জন্য নির্দিষ্ট সময়-
যোগাভ্যাস করলে এবং অন্যান্য স্ট্রেচিং ব্যায়াম করলে শুধু ওভারিয়ান সিস্ট নিরাময়ে সাহায্য হবে না, ঋতুস্রাবের অসুবিধাগুলিও, যেমন ঋতুস্রাবের যন্ত্রণা এবং পেটে এবং পিঠে খিল ধরা কমে যাবে। নিয়মিত ব্যয়াম করলে মানসিল চাপের মাত্রাও কমে যাবে এবং ওভারিয়ান সিস্ট কমে জাওয়ার কারণে সারা শরীরে আরাম বোধ হবে।
৭.ঋতুস্রাবের সময় আরামদায়ক কাপড় পরুন-
ঋতুস্রাবের সময় টাইট এবং অস্বচ্ছন্দ কাপড়জামা পরলে আপনার তলপেটে চাপ পড়বে এবং ব্যাথা বাড়বে। সেই কারণেই আরামদায়ক এবং ঢিলেঢালা পোশাক পরা বাঞ্ছনীয়।
৮.প্রচুর পানি খান-
দিনে 7-8 গ্লাস জল খেলে শরীর থেকে যাবতীয় টক্সিন বার হয়ে যাবে এবং প্রদাহ কমবে। অতএব শরীরে যেন জল কম না হয়।
৯.বিশ্রাম নেওয়ার কৌশল-
মানসিক চাপ এবং দুশ্চিন্তা- র কারণে হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হতে পারে বলে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়। সক্রিয় বা ফাংশনাল সিস্টের অন্যতম স্বাভাবিক কারণ হল মানসিক চাপ। এই কারণে, নিরুদ্বেগ জীবনের জন্য যে সব কৌশল অবলম্বন করতে হবে তার মধ্যে আছে গভীরভাবে শ্বাস নেওয়া, ধ্যান করা, ব্যায়াম করা, বা কোনও থেরাপি করানো, যাতে শরীর এবং মন একটি ভারসাম্যের অবস্থানে থাকতে পারে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: