ওর জন্ম প্রাকৃতিকভাবে হয়েছে, ওর বেড়ে উঠাও প্রাকৃতিকভাবে হোক।
নারীকথন | প্রকাশিত: ৮ অক্টোবর ২০২০ ০২:১৫; আপডেট: ৪ জুন ২০২৩ ১৩:০৪

আমি রুবাইয়া বিনতে রাজ্জাক। গ্রাজুয়েশন শেষ করেছি হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। বর্তমানে কাজ করছি চাইল্ড নিউট্রিশন নিয়ে।কর্মজীবন শুরু করেছিলাম একটা প্রাইভেট সফটওয়্যার ফার্মের মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ হিসেবে তবে মাস পার হতে না হতেই বাংলাদেশের প্রাইভেট সেক্টরের নারীদের কমন প্রতিবন্ধকতা গুলো চোখে স্পষ্ট হতে শুরু করে, ফলে কাজের আগ্রহ হারিয়ে ফেলি এবং পুরোপুরি সাইনআউট করি।
দাম্পত্যের ২ বছরের মাথায় কন্সিভ করি। যদিও ব্যাপারটা পুরোপুরি আনপ্ল্যান্ড ছিলো তবে আমরা দু’জনই খুশি ছিলাম। আমাদের বিয়েটা লাভ কাম এরেন্জ্ড। প্রায় বছর পাঁচেক প্রেমের পর দুজন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম গাঁটছড়া বাঁধার।
আমি প্রেগ্ন্যান্সির শুরু থেকেই মা ও শিশু বিষয়ক প্রচুর দেশী বিদেশি আর্টিকেল পড়তাম। ইউটিউবে ডাক্তারদের চ্যানেলগুলো নিয়মিত ফলো করতাম। গর্ভকালীন মা’য়ের স্বাস্থ্য,গর্ভস্থ শিশুর স্বাস্থ্য, গর্ভকালীন মায়ের পুষ্টি, গর্ভস্থ শিশুর খাদ্য, গর্ভকালীন দাম্পত্য জীবন এবিষয় গুলো নিয়ে এতটায় আগ্রহী ছিলাম যে সে সময়েই এবিষয়ক একটা অনলাইন কোর্স করে ফেলি। এরপর শুরু করি নিউট্রিশন নিয়ে পড়াশোনা। একজন গর্ভবতী মহিলার দিনে কি পরিমান প্রোটিন প্রয়োজন, কি পরিমান কার্বোহাইড্রেট প্রয়োজন এগুলো মাথায় একদম সেটে গিয়েছিল, নিজেও চলতাম সেভাবেই, যার ফলে প্রেগ্ন্যান্সি জার্নিটা ভিষণ স্মুথ হয়েছিল।
হ্যাপি প্যারেন্টিং ???? এর বীজপত্তন সে সময়টা তেই। বলে রাখি আমি শুরু থেকেই নরমাল ডেলিভারির ব্যাপারে একদম ডিটারমাইন্ড ছিলাম এবং এরজন্য যা যা করবার প্রয়োজন ছিলো তার সবটাই করেছি। ডাক্তারের পরামর্শে নিয়মিত হাঁটাহাটি, পুষ্টিকর খাবার খাওয়া, দাম্পত্য জীবন মেইনটেইন, একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর থেকে এক্সারসাইজ, লেবার পেইন ইনডিউস করবার ব্যায়াম সব করেছি। সে সময়টাতে ফেসবুকের কিছু প্রেগন্যান্সি গ্রুপ ফলো করতাম, যেখানে এক্সপার্ট রা সাহায্য করতেন।কিন্তু সেখানে দেখতাম একজনের হেল্প পোস্টের বিপরীতে হাজারটা মানুষের পরামর্শ। স্বাভাবিক ভাবেই হাজার মুনির হাজার মত হবে,হতোও তাই। ফলে উপকার পাবার থেকে আমি বেশির ভাগ সময় কনফিউজড হতাম এটা নিয়ে যে ‘কার পরামর্শ আমি গ্রহন করবো’!
তখনই ডিসিশন নিয়েছিলাম গর্ভবতী মহিলাদের জন্য এমন একটা যায়গা তৈরি করবো যেখানে থেকে তারা ট্রুলি বেনিফিটেড হবে, যেখানে মন খুলে ডাক্তারদের প্রশ্ন করতে পারবে, যেখানে সমাজের তথাকথিত ট্যাবুগুলো থাকবে না। মেয়েদের জন্য সিকিউর একটা পরিবেশ তৈরি করতে চেয়েছিলাম যেখানে প্রাণ খুলে শারীরিক গোপন সমস্যা গুলো নিয়ে আলোচনা করা যাবে, যেখানে ডাক্তারদের প্রশ্ন করতে লজ্জা পেতে হবেনা।
আমার বাচ্চা হবার ইমিডিয়েট পরেই ছ’জন ডাক্তার এবং তিনজন পুষ্টিবিদ বন্ধুকে নিয়ে গ্রুপের কাজ আরম্ভ করি, শুরু হয় “হ্যাপি প্যারেন্টিং” এর পথচলা। আমরা গ্রুপে মূলত কাজ করছি “মা ও শিশুর স্বাস্থ্য” নিয়ে। আমরা এখানে বিনামূল্যে ডাক্তারি সহায়তা এবং গর্ভকালীন খুটিনাটি পরামর্শ দিয়ে রুগীদের সাহায্য করে থাকি। করোনা কালীন এ সময়ে হ্যাপি প্যারেন্টিং গর্ভবতী মহিলাদের কি যে উপকার করছে তা বলাবাহুল্য। বর্তামানে হ্যাপি প্যারেন্টিং এর সদস্য সংখ্যা প্রায় ২,২০০ এবং তারা সবাই আমাদের এ সেবার আওতাধীন।
বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: